ফাইভ জি প্রযুক্তি
ফাইভ জি প্রযুক্তি
ফাইভ জি প্রযুক্তিবাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে ২০২৩ সালের মধ্যে ৫জি বা ‘পঞ্চম প্রজন্মের প্রযুক্তি’ সেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার কাজ বাংলাদেশ সরকার শুরু করেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর কোম্পানি ‘টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড’ ফাইভ জি প্রযুক্তির এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে ২ হাজার ২০৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গত ১০ আগস্ট ‘গ্রাম পর্যায়ে টেলিটকের নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ এবং ৫জি সেবা প্রদানে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়ন’ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। এছাড়া রাজধানীর ২০০ জায়গায় ‘ফাইভ জি’ পরিষেবা চালু হচ্ছে। তাই ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তি কী এবং তার সুবিধা ও কাজ সম্পর্কিত সেই বিষয়টি আলোচনা করা হলো। ৫জি প্রযুক্তি কী ৫জি পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি; প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থার পর বর্তমানে ওয়্যারলেস মোবাইল নেটওয়ার্ক কাঠামোটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। ভার্চুয়ালি সকলকে মেশিন, অবজেক্ট এবং ডিভাইসের একই যোগসূত্রে আবদ্ধিত করেছে। ৫জি ওয়্যারলেস প্রযুক্তি উচ্চগতিসম্পন্ন বহু জিবিপিএস ক্ষমতার গতিপ্রবাহের মাধ্যমে ডাটা সরবরাহ করে। আল্ট্রা লো লেটেন্সি, অধিক নির্ভরযোগ্য, ব্যাপক হারে ব্যান্ডউইথ নেটওয়ার্ক ধারণক্ষমতা, সহজলভ্য এবং সংগঠিত ইউজার সুবিধা প্রদান করে। উচ্চ কর্মক্ষমতা এবং উন্নত প্রযুক্তি ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক মানুষের কাছে নতুন কর্মগতি সঞ্চারণ করেছে। ফাইভ জি রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে, যা স্মার্টফোন, ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনে ব্যবহার হয়। ৫জি প্রযুক্তির কল্যাণে সেকেন্ডের মধ্যে শিক্ষামূলক এইচডি ভিডিও ডাউনলোড করতে পারবেন।৫জি প্রযুক্তি ২০ জিবিপিএস পর্যন্ত গতিতে অবস্থান করতে পারে, যেখানে ৪জি-তে ১ জিবিপিএস পর্যন্ত সর্বোচ্চ গতি আসত। ৫জি প্রযুক্তিতে বিলম্বের হার স্বল্প, যা ব্যবসায়িক পরিধিতে কার্যক্রম পরিচালনাতে বেশ গতি এনেছে। সেলুলার প্রযুক্তিতে ৪জি এলটিইতে যেখানে যোগাযোগ নিশ্চিত করাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল, সেখানে ৫জি সেই অবস্থাকে ক্লাউড ও সেবাগ্রহীতার মাঝে ভালো যোগাযোগ তৈরি করে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। সফটওয়্যারনির্ভর ৫জি নেটওয়ার্ক সেলুলার এবং ওয়াই-ফাই’র প্রবেশে বিচরণ আরও সহজ করেছে। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই ব্যবহারকারী থাকুন, ওয়্যারলেস যোগাযোগ ব্যবস্থাপনার সুবিধা গ্রহণ করে একে অন্যের সাথে মুহূর্তের ভেতর ডাটা বা তথ্য আদান-প্রদান এবং দূরের মানুষের সাথে কথা বলতে পারছেন। ৫জি প্রযুক্তির বিপ্লব ১৯৭৯-এর দশকে জাপানের নিপ্পন টেলিগ্রাফ ও টেলিফোন কর্পোরেশনের কল্যাণে বিশ্বের মানুষ সর্বপ্রথম ওয়্যারলেস যোগাযোগ ব্যবস্থা ১ জি’র ৮০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রামের সাথে পরিচিত হয়। ৪জি বা চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি প্রথম প্রজন্মের তুলনায় হাজার গুণ বেশি দ্রæতসম্পন্ন। প্রথম প্রজন্মের প্রযুক্তিতে মোবাইল ফোনে স্বল্প পরিমাণে ভয়েস কল করা যেত, ১৯৯১ সালে এসে দ্বিতীয় প্রজন্মে সেই প্রযুক্তিতে ভয়েস কলের সাথে এসএমএস একীভ‚ত হয় এবং ১.৯ গিগাহার্টজ স্পেকট্রামে ছবি ও ভিডিও পাশাপাশি মোবাইল দিয়ে শেয়ারের সুযোগ তৈরি হয়। থ্রিজি যুগে ২০০০ সালে ২.১ গিগাহার্টজ স্পেকট্রামের যুগে বিশ্ব যখন যুক্ত হয়, তখন মোবাইলে উচ্চমাত্রার ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয় এবং চতুর্থ প্রজন্ম ২০০৯ সালে বাণিজ্যিকভাবে সুইডেনে যাত্রা করে, এতে মোবাইলে প্রাথমিকভাবে ৭০০ মেগাহার্টজ এবং ৫.২ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হতো, ভিডিও এবং উচ্চমানের ডাটা শেয়ার মানুষ করার সুযোগ পান। ২০১৯ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিকভাবে প্রথম স্মার্টফোনে ফাইভ জি প্রযুক্তি খাতে যাত্রার পর ৫জি বিপ্লব ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরেও ওয়্যারলেস কাঠামোর যোগাযোগ প্রযুক্তি কাঠামোকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। এটি ৬০০ মেগাহার্টজ, ২.৫ গিগাহার্টজ, ২৮ গিগাহার্টজ এবং ৩৯ গিগাহার্টজের মধ্যে অপারেট হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘ফাইভ জি’ যথারীতি যোগাযোগে অভ‚তপূর্ব পরিবর্তন এনেছে। ভেরিজন’র ফাইভ জি আল্ট্রা ওয়াইডব্যান্ড নেটওয়ার্ক কাঠামো ৭০টির বেশি শহরে ৫জি সেবা প্রদান করছে, এবং আমেরিকাজুড়ে বর্তমানে ২৭০০-এর বেশি শহর ৫জি নেটওয়ার্ক অবকাঠামোর অন্তর্ভুক্ত। যত দিন যাচ্ছে মানুষ ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তির দ্রæত গতি, বৃহৎ ক্ষমতা, অনেক ডটিা নিয়ে কাজের সুবিধার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করছে। পঞ্চম প্রজন্মের এই প্রযুক্তি ভবিষ্যৎ উদ্ভাবনের পথ সুদৃঢ় করবে, কারণ উচ্চ গতির বৃদ্ধি মানুষের ব্যক্তিজীবনের নিরাপত্তা ও ব্যবসাতে অনেক সুযোগ তৈরি করবে। ৫জি উচ্চমানের ভিডিও দ্রæত সরবরাহ করতে পারে, যেটা দেখে মানুষের নিরাপত্তা এবং অফিশিয়াল অনেক কার্যক্রমের বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দ্রুত সময়ে নেয়া সক্ষম, কারণ সঠিক চিত্র এতে ফুটে ওঠে। নিরাপদ যান চলাচলে দ্রæত সাড়া প্রদান বিশ্বজুড়ে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। কেনো ৫জি প্রযুক্তি ব্যবহার করবেন ৪জি বা চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তি ছিল ৪জি এলটিইভিত্তিক দ্রæতগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড পরিষেবা, আর ৫জি তুলনামূলক ১০ গুণ অধিক দ্রæত ও বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এবং তাৎপর্যভাবে স্বল্প বিলম্ব, সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম, ভালো স্পেকট্রাম ব্যবহার করে। আইওটি বা ‘ইন্টারনেট অব থিংস’ প্রাধান্য দিয়ে আরও বৃহৎ পর্যায়ে সন্নিবেশিত যোগাযোগ মডেল তৈরি এবং পাশাপাশি লাইসেন্স, শেয়ার্ড, আন-লাইসেন্স স্পেকট্রাম সাপোর্ট করে। ১ থেকে ৬ গিগাহার্টজ পর্যন্ত মধ্যম পর্যায়ে ব্যান্ড ব্যবহার করে এবং উচ্চ পর্যায়ের স্পেকট্রাম অবস্থাকে ‘মিলিমিটার ওয়েভ’ নামেও অনেকে উল্লেখ করেন। ডেটা প্রেরণে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ২০ জিবিপিএস পর্যন্ত উঠে এবং ১০০ এমবিপিএস ডেটা বা তথ্য প্রেরণ প্রতি সেকেন্ডে গড়ে থাকে। ‘ফাইভ জি’ ১০০ গুণ বেশি ট্র্যাফিক ধারণক্ষমতা এবং নেটওয়ার্ক দক্ষতা সাপোর্ট করে। ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে একজন স্মার্টফোন গ্রাহক ১১ জিবি ডেটা ব্যবহার করবেন। বর্তমানে ৬১ টি দেশে ৫জি ব্যবহার শুরু হয়েছে এবং দ্রæত বিকাশ লাভ করেছে। ৩.৫ বিলিয়নেরও অধিক মানুষ স্মার্টফোনে ৫জি সুবিধা নিতে সক্ষম। এডজ কম্পিউটিংয়ে ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার অগ্রগতি আনবে। যেহেতু অনেক ডাটা দ্রæত প্রেরণ করতে হয় ও স্বল্প বিলম্বতা থাকে এবং রিয়েল টাইম ডাটা বা তথ্য পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ এখানে, সেহেতু নিকট দূরত্বের জায়গায় যোগাযোগে ব্যাপক আকারে ডাটা প্রেরণে ৫জি এডজ কম্পিউটিংয়ে সহায়ক। ৫জি নেটওয়ার্কের ধরন ফাইভ জি নেটওয়ার্ক অবকাঠামোতে তিন ধরনের স্পেকট্রাম ব্যান্ড কাভারেজ ভিন্ন রেডিও তরঙ্গ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিদ্যমান। লো ব্যান্ড ৫জি জাতীয় পর্যায়ে লো ব্যান্ড স্পেকট্রাম একই তরঙ্গ নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে বিস্তৃত থাকে, একই তরঙ্গ টিভি স¤প্রচারে ব্যবহার হয়। যদি স্পেকট্রাম ব্যান্ড উচ্চ ডেটা হার সরবরাহ করতে পারেনা স্বল্প স্পেকট্রাম বরাদ্ধ থাকাতে, কিন্তু গ্রাহক পর্যায়ে কয়েকশ বর্গমাইলজুড়ে প্রত্যন্ত এলাকাতে তরঙ্গ প্রচার ব্যবস্থা ভালো প্রদান করে। বেজলাইন টায়ার ৪জি এলটিই নেটওয়ার্ক থেকে প্রায় ২০ ভাগ দ্রæত, এটি সাব-১ গিগাহার্টজ ব্যান্ড নিয়ে বিস্তৃত পরিধিতে কাজ করে। মিড বা মাঝারি ব্যান্ড ৫জি ৪জি এলটিই থেকে ৬ গুণ বেশি দ্রæত মিড ব্যান্ড ৫জি। স্পেকট্রাম ব্যান্ড (১-৬ গিগাহার্টজ) মধ্যে থাকে এবং উচ্চমানের ৫জি ডিভাইস সাপোর্ট করে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরগুলোতে কিছু জায়গাজুড়ে পরিষেবা নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, লো ব্যান্ডের তুলনাতে স্বল্প জায়গাতে এর সেবা থাকে কারণ মিড ব্যান্ডের কেরিয়ারগুলোতে অনেক রিসোর্স বরাদ্ধ থাকে এবং লো ব্যান্ডের তুলনায় ডাটা প্রেরণ গতিও ভালো থাকে। উচ্চ ব্যান্ড ৫জি ৬ গিগাহার্টজ বা তার বেশি স্পেকট্রাম ব্যান্ড উপস্থিত থাকে, এবং ৪ এলটিই নেটওয়ার্কের তুলনায় ১০ গুণ বেশি দ্রæত। তাৎক্ষণিক সময়ে তথ্য প্রেরণ করে এবং টাওয়ারের কাছে অবস্থিত পরিধি। মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ এবং বিস্তৃত ব্যান্ডউইথ স্পেকট্রাম একে উচ্চপরিমাণ ডাটা প্রেরণ করতে সাহায্য করে, স্মার্ট সিটি প্রযুক্তিতে ব্যবহার অনেক থাকে। কী স্পেকট্রাম ৫জি’তে ব্যবহার হয় স্পেকট্রাম একটি ফ্রিকুয়েন্সি বা তরঙ্গ চ্যানেল, যেটা স্মার্টফোন অথবা ইন্টারনেট সংযোগকৃত ডিভাইস এবং অ্যান্টেনাতে ডাটা প্রেরণ করে। ৫জি’র দুটি প্রধান স্পেকট্রাম একটি ‘এমএমওয়েভ’ এবং আরেকটি ‘সাব-৬’। সাব-৬ নিম্ন ও মধ্যম ব্যান্ড স্পেকট্রাম যা ৬ গিগাহার্টজের নিচের তরঙ্গ ব্যবহার করে। যদিও এতে এমএমওয়েভ এর দ্রæত গতি থাকে না। অপরদিকে, এমএমওয়েভ স্পেকট্রাম বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার হয় না, এছাড়া স্বল্প দূরত্বে অত্যধিক গতিতে সাপোর্ট দেয়ার ক্ষমতা আছে। প্রাথমিক অবস্থায় ৪জি এবং ৫জি নেটওয়ার্ক একই কাঠামো ব্যবহার করে একত্রিতভাবে কাজ করতে পারে। যখন একটি মোবাইল ডিভাইস ৫জি নেটওয়ার্কে সংযোগ হয়, একই সাথে ৪জি নেটওয়ার্কে সংকেত প্রেরণ ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু ৫জি’র নেটওয়ার্ক সীমিত পরিসরে থাকলে ডাটা ৪জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে যোগাযোগ নিয়মিত রাখে। ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তি কীভাবে কাজ করে মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রধান দুটি উপাদানের ওপর নির্ভর করে কাজ করে, একটি রেডিও এক্সেস নেটওয়ার্ক এবং অপরটি, কোর নেটওয়ার্ক। রেডিও এক্সেস নেটওয়ার্ক ক্ষুদ্র সেল, টাওয়ার, হোম সিস্টেমের মতো পদ্ধতি একীভ‚তভাবে থাকে; যা মোবাইল ব্যবহারকারীদের এবং ওয়্যারলেস ডিভাইসকে কোর নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত রাখে। ক্ষুদ্র সেল ৫জি নেটওয়ার্কে বিশেষ করে, মিলিমিটার ওয়েভ তরঙ্গে বেশ প্রভাব রাখে যেখানে স্বল্প দূরত্ব। ক্রমাগত যোগাযোগ সরবরাহে ক্ষুদ্র সেল ক্লাস্টার বা কণাতে বণ্টিত হয়, যেখানে ব্যবহারকারীর যোগাযোগের দরকার পরে। এটি ম্যাক্রো নেটওয়ার্ক, যা বিস্তৃত এলাকা কভার করে। ৫জি মাইক্রো সেল ‘ÔMIMOÕ’ অর্থাৎ, ‘মাল্টিপল ইনপুট এবং মাল্টিপল আউটপুট’ অ্যান্টেনা ব্যবহার করে, ডাটা নিয়মিতভাবে গ্রহণ এবং প্রেরণ করতে যার একাধিক উপাদান বা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকে। এ ব্যবস্থাপনাতে ব্যাপক সংখ্যক অ্যান্টেনা ব্যবহার করা হয়, যা ÔMassive MimoÕ হিসেবে অভিহিত। অপরদিকে, কোর নেটওয়ার্ক হচ্ছে মোবাইল বিনিময় বা ডাটা নেটওয়ার্ক, যা মোবাইল ভয়েস, ডাটা বা তথ্য এবং ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে। ৫জি’র জন্য কোর নেটওয়ার্ক ইন্টারনেট এবং ক্লাউডনির্ভর পরিষেবা এবং ডিস্ট্রিভিউটেড সার্ভার নেটওয়ার্কজুড়ে বিস্তৃত করে সাড়া প্রদান দ্রæত করার বিষয় একীভ‚ত করে পুনরায় ডিজাইন করা হয়েছে। ৪জি এলটিই প্রযুক্তির মতো ৫জি বিশাল পরিসরে রেডিও স্পেকট্রাম অপারেট করে, চিরাচরিত ৫জি যা ব্যবহার হয় সেটা সাব-৬, সাব-৬ যে ৫জি অপারেট করে তা ৬ গিগাহার্টজ ফ্রিকোয়েন্সি বা তরঙ্গের নিচে থাকে। যেমন টি মোবাইল’র ৬০০ মেগাহার্টজ নিম্ন ব্যান্ড স্পেকট্রাম আছে। সাব-৬ স্পেকট্রামের জন্য অনেক টাওয়ার নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে না। অপরদিকে, এমএমওয়েভ উচ্চমাত্রার রেডিও তরঙ্গ যা ৩০-৩০০ গিগাহার্টজের মধ্যেও হয়, যেটা ৫জি সংযোগ উচ্চমাত্রায় ব্যবহার উপযোগী করেছে, বিশেষ করে প্রতি সেকেন্ডে গিগাবিটস গতিতে ডাউনলোড প্রদান করে। শক্তিশালী এমএমওয়েভ নেটওয়ার্ক তৈরি করতে প্রত্যেক শহরে বাহনযন্ত্রগুলোকে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র সেলের দরকার পরে। এমএমওয়েভে ব্যাপক ডাটা স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং অধিক বসতির শহরে তাই ভালো কাজ করে ৫জি একাধিক ইনপুট ও আউটপুট অ্যান্টেনা ব্যবহার করে সংকেত প্রদান এবং ধারণক্ষমতা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে উন্নত করে। উচ্চ ব্যান্ডে ডাটা প্রেরণ দ্রæতগতির হলেও ফিজিক্যাল বস্তুর কারণে বিস্তৃত জায়গায় ঠিক উপায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। ৫জি প্রযুক্তি একটি ফিজিক্যাল নেটওয়ার্ককে কয়েকটি ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কে বিভক্ত করতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক নেটওয়ার্ক অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহককে প্রেরণ করে। প্রতি মিটারে ৪জি’র তুলনায় ১ হাজারের বেশি ডিভাইসকে ৫জি প্রযুক্তির মাধ্যমে সাপোর্ট প্রদান করতে পারে। কিন্তু যেখানে ৫জি নেটওয়ার্ক কাভারেজ সীমিত, সেখানে ডাটা প্রেরণে ৪জি নেটওয়ার্ক সংযোগ প্রদান করা হয়। বিশ্ব অর্থনীতিতে ৫জি প্রযুক্তির প্রভাব ১৩.১ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বিশ্বজুড়ে ৫জি এর কল্যাণে বিস্তৃতি লাভ করছে। গত কয়েক বছরে ২২.৮ মিলিয়ন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি সম্ভব হয় এই প্রযুক্তির কারণে এবং বার্ষিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার করে ৫জি প্রযুক্তি আগামী ১৫ বছর সারা বিশ্বে পরিব্যাপ্তি নিয়ে আসবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ‘ফাইভ জি’ ব্যাপক আকারে প্রোডাক্ট এবং সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে একটি পরিবর্তন আনবে। অ্যাপ ডেভেলপার, কনটেন্ট তৈরি এবং কাস্টমার পর্যায়ে ৫জি প্রযুক্তির ব্যবহারে ভবিষ্যতে আরও অগ্রগতি দ্রæত আসবে। ‘গেøাবাল সিস্টেম ফর মোবাইল কমিউনিকেশনস অ্যাসোসিয়েশন’ (জিএসএমএ) সূত্রে, ২০২৫ সাল নাগাদ সারা বিশ্বে ১.৭ বিলিয়ন ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী হবে তারা আশা করছে। আর ২০৩৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতির ২.২ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি শুধুমাত্র ৫জিকেন্দ্রিক দাঁড়াবে; যাতে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা ১৫ ভাগ, কৃষি খাত ও খনি ৭ ভাগ, উৎপাদন ব্যবস্থা ৩৪ ভাগ, অর্থনৈতিক খাত ২৮ ভাগ এবং পাবলিক সার্ভিসে ১৬ ভাগ অবদান থাকবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া ২০১৮ সালের শেষ প্রান্তিকে ৫জি পরিষেবা চালুর মাধ্যমে ফাইভ জি যুগের সূচনা করে। জিএমএমএ’র পূর্বাভাসে, ২০২৫ সালের মধ্যে আমেরিকাতে ৫০ ভাগ এবং জাপানে ৪৯ ভাগ ৫জি নেটওয়ার্ক ব্যবহারকারী থাকবেন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৫ সালে ৫জি-কেন্দ্রিক আয় বিশ্বে ১.১৫ ট্রিলিয়ন ডলার হবে। চীন একক দেশ হিসেবে ৪৫০ মিলিয়ন ৫জি প্রযুক্তি মোবাইল ব্যবহারকারীর মাধ্যমে ২০২৫ সালে সর্ববৃহৎ ৫জি প্রযুক্তির বাজারে পরিণত হবে। ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ রোডম্যাপ লক্ষ্যকে সামনে রেখে প্রযুক্তি বিশ্বে ক্লাউড কম্পিউটিং, আইওটি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তিতে ৫জি ব্যবহারের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার তৈরি করবে। ‘অপারেটর ক্লাউড’ পদ্ধতি মোবাইল কোম্পানিগুলোর জন্য ২০২২ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপর আয়ের উৎস তৈরি করবে ৫জি’র মাধ্যমে, বিশেষ করে ডাটা স্টোরেজ, কনটেন্ট ডেলেভারি নেটওয়ার্কের (সিডিএন) মাধ্যমে অর্থ আসবে। ৫জি যুগে সাবস্ক্রিপশন, পে এস ইউ ইউজ, প্যাকেজ বান্ডিল, ভিন্ন মূল্য, প্ল্যাটফর্ম বিজনেসের মতো বেশ কিছু মডেল ব্যবসার আধিপত্য করবে। ক্লাউড অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ৫জি সময়ে মোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আর্থিকভাবে বিস্তৃত সুবিধা তৈরি করবে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘হুয়াওয়ে’র মতে, ২০২৫ সালে এর বাজার ২৯২ বিলিয়ন ডলার হবে এবং এতে অপারেটরদের ৯৩ বিলিয়ন ডলারের বাজার থাকবে।২০২১ সালের জানুয়ারিতে স্যামসাং প্রতিষ্ঠান ‘গ্যালাক্সি এস২১ আল্ট্রা ৫জি’ উন্মোচন করে তাদের ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনাকে আরও স¤প্রসারিত করেছে। শুধু ফোনে এখন ৫জি সীমাবদ্ধ নেই, ২০২০ সালে স্যামসাং তাদের ‘এস সেভেন ট্যাব’ এবং ‘এস সেভেন প্লাস’ আনার মাধ্যমে প্রথম ৫জি সুবিধা সংবলিত ট্যাব ইউএস’র বাজারে আনে। বর্তমানে নতুন মোবাইল ডিভাইসগুলো কোয়ালকমের ৫জি ক্ষমতাসম্পন্ন চিপসেটগুলো ব্যবহার করে। ৫জি তরঙ্গ, এর ব্যবস্থাপনা, ৫জি-কেন্দ্রিক ডিভাইস তৈরি এবং মার্কেটিং ও এর সাথে জড়িত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি আরও বিস্তৃতভাবে বিশ্ব অর্থনীতিকে আরও সুবিশাল করবে।৫জি’র প্রযুক্তি সুবিধা৫ম প্রজন্মের এই প্রযুক্তি আমাদের সমাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আরও অনেক ধরনের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে, যেমনÑ ক্স ১ বর্গকিলোমিটার এলাকাতে ১ মিলিয়ন ডিভাইসকে ৫জি প্রযুক্তির আওতায় সুবিধা দেয়া যায়। ৫জি’র ডাটা আপলোড গতি স্বাভাবিক সময়ে ৫০ এমবিপিএস এবং ডাউনলোড স্পিড ১০০ এমবিপিএস, এতে দ্রæত সময়ে ডাটা শেয়ার করায় রাস্তাতে জ্যাম সম্পর্কে আগে জেনে নিতে পারবেন। এতে অর্থ সাশ্রয় এবং রাস্তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এছাড়া জরুরি প্রয়োজনে দূর থেকে রোবট এবং যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, ড্রোন ব্যবহার করে মুহূর্তে সাপোর্ট করতে সহায়তা করে। ক্স আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সনির্ভর অ্যাসিস্ট্যান্ট মনিটর প্ল্যাটফর্ম বিগ ডাটা মডেল অনুসরণ করে সেন্সরের সহায়তায় দ্রæত প্রাকৃতিক দুর্যোগ আভাস বুঝতে এবং সেই বিষয়ে উদ্যোগ নিতে সাহায্য করে। চীন ইতিমধ্যে মোবাইলের মাধ্যমে প্রাকৃতিক বন্যার মতো বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ এবং সেটার ব্যবহারে হাইড্রোইলেকট্রিসিটি নিয়ন্ত্রণ, পানি প্রেরণ এবং পরিবেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণে কাজ করছে।ক্স আইওটি ডিভাইসের সহযোগিতা নিয়ে কৃষি বিপ্লবে শস্য উৎপাদনে অনেক সহায়ক। বিশেষ করে মোবাইল আইওটি শস্যের মান, নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা মাটির অবস্থা, কীটনাশক, সার, পরিবেশ এবং পশু-পাখির বিচরণের ওপর নির্ভর করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে, অর্থাৎ কখন কেমন পুষ্টি উপাদান, সার প্রয়োজন মাটির এবং কখন দিলে শস্য উৎপাদন ভালো হবে সেটার দিকনির্দেশনা আপনাকে প্রদান করে।ক্স ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তির ডিভাইসগুলোর ব্যবহারে ৫জি প্রযুক্তি অনেক ভ‚মিকা আছে। ভার্চুয়াল মিটিং, রিমোট টিম কার্যক্রমে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।ক্স ৫জি’র কারণে স্বাস্থ্যখাতে ওয়াই-ফাই ৬ প্রযুক্তি একীভ‚ত হয়ে ওয়্যারএবল ডিভাইসের মাধ্যমে রোগীর প্রতি মুহূর্তের ডাটা বা তথ্য দ্রæত পর্যবেক্ষণ করে, এতে সেই অনুযায়ী তাড়াতাড়ি রোগীর চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয়। ‘জিএসএমএ ডিজিটাল হেলথ কেয়ার রিপোর্ট ২০১৬’ তথ্যানুযায়ী স্বাস্থ্য খাতের ডিজিটালকরণের কল্যাণে ইউরোপে ৯৯ বিলিয়ন ইউরো সাশ্রয় হবে এবং ব্রাজিলে সেটা ১৪ বিলিয়ন ডলার।ক্স এডজ কমপিউটিং, ক্লাউড নেটওয়ার্ক কাঠামোর যুগে ৫জি প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর ডাটা নিরাপত্তা, উদ্ভাবনের মতো কাজগুলো উন্নয়নে পুরো বিশ্বকে একীভ‚ত করতে সক্ষম। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যবসা পরিচালনাতে সাপোর্ট এবং ডিমান্ডের সহযোগিতাতে যোগাযোগ দ্রæত করে উৎপাদন ব্যবস্থাপনা সহজ করে। ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তি পরিষেবা গ্রহণের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশের মানুষ; বিশেষ করে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো, শিক্ষা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, কৃষিক্ষেত্রে অবস্থা উন্নীতকরণে যেমন দ্রæততা আসবে, তেমনি উদীয়মান ই-কমার্স ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম স¤প্রসারণে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক পরিবর্তনে ব্যাপক পরিসরে আশার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
মতামত দিন আপনার ইমেল প্রকাশিত হবে না।
আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার মতামতটি দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন।
যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।
রিভিউ ( ০ / ৫ )
আপনি লগ ইন অবস্থায় নেই।
আপনার রিভিউ দেওয়ার জন্য লগ ইন করুন।
যদি রেজিষ্ট্রেশন করা না থাকে প্রথমে রেজিষ্ট্রেশন করুন।
০ টি মন্তব্য